ভালোবাসা বলুন আর প্রেমই বলুন, আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এটা। প্রেমে সুখ যেমন আছে, তেমনই আছে প্রতারণা আর কষ্টও। আবার অনেক সময়েই আমরা বুঝে উঠতে পারিনা পছন্দের মানুষটা আদৌ আমাদের ভালোবাসেন কি বাসেন না। হয় না এমন বিভ্রান্তি? খুব হয়! কেবল চিৎকার করে “ভালবাসি” বললেই হয়ে যায়না ভালোবাসা, বরং একটি সত্যিকারের সম্পর্কে থাকে অনেকগুলো চমৎকার দিক। আসুন, আলোচনা করা যাক সেগুলোর মাঝে কয়েকটি নিয়ে।
সম্মানটা প্রথমেই জরুরী-
ভালোবাসার প্রথম প্রকাশ কিন্তু আসে সম্মান দেয়ার মাধ্যমেই। অনেকেই আছেন যারা কিনা নিজের সঙ্গী/ সঙ্গিনীকে খুব খাটো করে দেখেন। সময়ে–অসময়ে বলে বসেন, “তুমি কি জানো?তুমি কি বোঝো?” ...তাই না? এটা আর যাই হোক, ভালোবাসা হতে পারে না। যিনি আপনাকে অন্তর দিয়ে ভালবাসবেন, অবশ্যই আপনার বিচার-বুদ্ধি-রুচি-আবেগের ওপরে তার আস্থা থাকবে। আপনার সম্মানকে তিনি কখনোই খাটো করে দেখবেন না।
লক্ষ্য রাখেন কিনা ছোটখাট ব্যাপারে-
প্রেম বা ভালোবাসা মানে কেবল রাত জেগে ফোনে আলাপ নয়, কিংবা দামী গিফট বিনিময় নয়। বরং একটি আবেগময় সম্পর্ক বা ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে পরস্পরের পরোয়া করা, বিনা বাক্যে বুঝে নেয়া মনের কথা। একটু খেয়াল করে দেখুন তো আপনার ছোটখাট ব্যাপার তাঁকে নাড়া দেয় কিনা! আপনার কণ্ঠ উদাস শোনালে কি সেটা তার কানে বাজে? মনটা আপনার বিষণ্ণ হলে কি তিনি টের পান?
কেন ভালোবাসেন তিনি আপনাকে?-
এটা জানাটা বা অনুভবের চেষ্টা করাটা ভীষণ জরুরী একটা ব্যাপার। আপনি অনেক সুন্দর, কিংবা আপনার অনেক টাকা আছে, কিংবা আপনি খুব বিখ্যাত মানুষ... এইগুলো কখনো ভালোবাসার নেপথ্যের কারণ হতে পারে না। শারীরিক সৌন্দর্য, অর্থ, খ্যাতি এগুলো খুব তুচ্ছ আর সাময়িক ব্যাপার। তাই এসবকে গুরুত্ব দিয়ে যিনি আপনাকে ভালোবাসেন, অবশ্যই আপনার জন্য তাঁর ভালোবাসা খাঁটি নয়। কেননা এই সৌন্দর্য, অর্থ, খ্যাতি কখনো ফুরিয়ে গেলে তিনি আর আপনাকে ভালোও বাসবেন না।
আপনার কষ্ট যখন তাঁর আপন-
মানুষ যাকে ভালোবাসে, তাঁর দুঃখ-কষ্টকে আপন করে নেয়। বেশি দূরে যেতে হবে না, নিজেকে দিয়েই ভেবে দেখুন। পছন্দের মানুষটির দুঃখ-কষ্ট সব আপনার আপন না? তাঁর একটু কষ্টে আপনি অস্থির হয়ে ওঠেন না? ঠিক একই ব্যাপার অপর মানুষটির ক্ষেত্রেও হয় কিনা লক্ষ্য করুন।
আপনাকে গুরুত্ব দেন কিনা-
গুরুত্ব দেয়া মানে তিনি সর্বক্ষণ আপনাকে নিয়েই থাকবেন, সেটা কিন্তু মোটেও নয়। বরং তাঁর জীবনে বা কোনও জরুরী বিষয়ে তিনি আপনার মতামত নেন কিনা, সেটা লক্ষ্য করতে হবে আপনাকে।
উপহারের মূল্য নয়, ভাবনা-
প্রিয় মানুষটিকে এটা-সেটা উপহার আমরা সকলেই দিয়ে থাকি। আপনার দেয়া সেই উপহারের ক্ষেত্রে কি মূল্যটা তাঁর কাছে খুব জরুরী হয়ে যায়? উপহারের পেছনে আপনার আবেগ দেখার বদলে কি তিনি উচ্চ মূল্যটাই বেশি লক্ষ্য করেন?
বন্ধুদের সাথে পরিচয় আছে তো?–
মানুষ যখন ভালোবাসে, তখন সেটা সবাইকে জানাতে চায়। এটা কেবল আপনার-আমার ক্ষেত্রে নয়, পৃথিবীর সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রেই। নিজের ভালো খবরটা, গর্ব করার স্থানটা মানুষ অন্যকে দেখাতে খুব আগ্রহ বোধ করে। আর এইজন্যই লক্ষ্য করুন তো, আপনার বিশেষ মানুষটি কি তার বন্ধুদের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে? সামাজিক কারণে হয়তো পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া সম্ভব হয় না সর্বদা, কিন্তু বন্ধুদের সাথে পরিচয় করানোটা খুব সাধারণ আর স্বাভাবিক ব্যাপার। আর সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণও।
তার উপস্থিতিতে নিজেকে আপনার বিশেষ লাগে কিনা–
এটা খুব জরুরী একটা বিষয়। আমরা যখন কাউকে ভালবাসি, তখন সেই মানুষটিই কিন্তু হয়ে ওঠে আমাদের কাছে সব চাইতে দামী। তাই না? তিনি আপনাকে ভালবেসে থাকলে তাঁর ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটবে। ভালোবাসার পৃথিবীতে আমরা সবাই রাজা-রানী। এবার একটু নিজের সম্পর্কের দিকে তাকান তো, তাঁর উপস্থিতিতে নিজেকে আপনার বিশেষ কেউ একজন মনে হয় তো? নাকি তিনি এতই অবহেলা করেন যে নিজেকে ভীষণ ক্ষুদ্র লাগে?
তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আপনি আছেন তো?-
মানুষ কাউকে ভালবাসলে তাঁকে সারাটা জীবন নিজের করে রাখতে চাইবে, আর এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। পরিণয় সম্ভব বা অসম্ভব যাই হোক না কেন, ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সত্যিকারের সঙ্গী/সঙ্গিনী মাত্রই করে থাকেন।
আপনাকে বদলাতে চেষ্টা করেন কি?
ভালোবাসা মানে কাউকে বদলে নেয়া না, বা বদলাতে চেষ্টা করা না। আপনি যেমন আছেন, তেমনটা দেখেই তো তিনি সম্পর্ক করেছেন। তাই না? তাহলে এখন কেন আপনাকে পরিবর্তনের চেষ্টা করা? তবে যে পরিবর্তন আপনার জন্য শুভ বা আপনার মঙ্গল হবে তাতে , সেগুলো অবশ্যই এই হিসাব নিকাশের বাইরে হবে।
আপনার আপন মানুষেরা তাঁর আপন তো?-
গ্রাম অঞ্চলে একটা কথা প্রচলিত আছে, মানুষ যাকে ভালোবাসে তাঁর বাড়ির কুকুরও নাকি আপন হয়ে যায়। অর্থাৎ, মানুষ চেষ্টা করে তাঁর পছন্দের মানুষটির সাথে জড়িত সব কিছুকেই আপন করে নিতে। লক্ষ্য করুন তো আপনার পরিবারের মানুষ বা বন্ধুদের সাথে তাঁর আচরণ কি রকম?
এই ব্যাপারগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যদি না সূচক জবাব আসে, তবে মনে হয় নিজের প্রেমের সম্পর্কটা নিয়ে আপনার আরও একটু যাচাই বাছাই করে দেখার সময় এসেছে। একটু যাচাই করতে তো ক্ষতি নেই কিছু, তাই না? যদি কয়েকটা উত্তর না সূচক আসে, তাহলে হয়তো দুই জনের মাঝে কোনও ভুল বোঝাবুঝি বা যোগাযোগের অভাব হচ্ছে। তবে ব্যাপার যাই হোক না কেন, পছন্দের মানুষের সাথে খোলামেলা কথা বলুন। তাঁকে বুঝিয়ে বলুন নিজের চাহিদা ও ইচ্ছা। দিনশেষে সম্পর্কটা আপনাদের, আর তাই আপনারাই সেটাকে সবচাইতে ভালো বুঝবেন।
ভালোবাসা ভীষণ সুন্দর একটা ব্যাপার। মানব সভ্যতার ভিত্তি এই মানবিক ভালোবাসার ওপরেই কিন্তু কায়েম। আর তাই আসুন, প্রতারণা দিয়ে কলুষিত না করি আমরা এই সুন্দর সম্পর্কে। ভালো থাকুন সবাই, ভালবাসুন। নিজেকে, পরিবারকে, বিশেষ মানুষটিকে, এই সুন্দর পৃথিবীকে।
Post a Comment